Friday 26 August 2016

দুটি প্রাণ দুটি পাতাবাহার

প্রায় দু'যুগ আগের পটভূমিকায় কবে যেন কি সব হযবরল লিখেছিলাম,নিম্ন শ্রেণীর শিশুর হাতের লেখা চর্চা করার দাগটানা খাতায়।কাগজগুলো যে খুব মলিন,বিবর্ণ,প্রাচীন হয়ে গেছে জীবন ও ব্যক্তির মত তা নয়।বেশ ঝকঝকেই  আছে।তো খেয়াল হল রাখি না এগুলোকে একটু গুছিয়ে একজোড়া দম্পতির ভগ্ন হৃদয়ের প্রমান স্বরূপ।সেই ষাট দশকের এক কাহিণী।
মনে করা যাক  জমিলা আর আক্কাস সেই ক্ষরিত হৃদয়ের একজোড়া দম্পতি।বহু দিন পর জমিলার নিরানন্দ জীবন আনন্দে যেন ঝলমল করছে এত রোশনাই,কোথায় ছিল মুখ লুকিয়ে ভাবে জমিলা।জমিলার জীবন পাত্রে আনন্দ উপচান শুধু বাকি। সতত বহমান  নদীর মতো জমিলা আর আক্কাস আলি  যেন অনবরত আনন্দে ছলছল  কলকল করছে।জীবনের আনন্দ-উল্লাস,উদ্দেশ্য,আশা ভরসা সবই যে কোথায় হয়েছিলো নির্বাসিত!ম্রিয়মান জমিলা হাসতে  ভুলে গিয়েছিল দীর্ঘ দিন হতে।জীবন যে এত সুন্দর,এত বর্ণাঢ্য এত ভুলেই  গিয়েছিলো জমিলা,রূপসী জমিলা।


শুধু কি জমিলা আক্কাসও তো উদাসিন হয়ে পড়েছিলো জীবন নির্বাহে।চর্তুপার্শ্বের সবুজ গুল্ম-লতা,বর্ণালি পুষ্পগুচ্ছ ওদের মনে দোলা দিতে ভুলে গিয়েছিলো।আজ সব দৃশ্যাবলী ওদের চোখে বড় রমনীয়,বড় আনন্দময় বড়ই অর্থবহ হয়ে ওঠে।
জমিলা বলে,নতুন শাড়ীটা পরেছি
আক্কাস বলে, ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে,না সত্যি বলছি,লজ্জা পেও না
-রং না উঠলেই হয়,
-দোকানী তো কিরে কেটে অত করে বলল একটু নাকি কষও যাবে না
-সে হলেই হয়
-আচ্ছা শাড়ীর রংটা কি  বল তো,দোকানি কি যেন বলল
-আমার মা বলত রাণি রং।সন্ধ্যা মালতি ফুলের রংএ রং
-তোমাকেও তো রাণির মতই দেখাচ্ছে
-এই বয়সে এত চড়া রং
- চড়া রং ব্যবহার করার মতো কিছু কি ঘটেনি
জমিলা যেন একটু লজ্জা পেয়ে মুখটা আড়াল করে দাঁড়াল।
সুন্দরী জমিলার বেশভূষায় কত পরিবর্তন।তার অংগে উঠেছে নতুন শাড়ী,নতুন ব্লাউজ।আক্কাস আলী নিজের জন্যও কিনেছে নতুন কাপড়।কুড়ি বছরের বিবাহিত জীবন তাদের।আনন্দ-উল্লাস,আশা- ভরসা বিলুপ্ত হলে জীবনের আর অবশিষ্ট থাকে কি?আশ-পাশের বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-পরিজনের দিকে চেয়ে জমিলার মনে হত এত দূর্ভাগী ও।

স্বামী আক্কাস আলীও অতি আনন্দিত।সরকারি অফিসের ছোট পদাধিকারী আক্কাসের  ইদানিং সময়ের কাজের গতিতে বস্ পর্যন্ত চোখ তুলে তাকান।ভাবেন কোন  সে  যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় আক্কাস আলী আজ এত চটপটে,মনোযোগী হয়ে উঠল।তারদিকে তাকিয়ে বলেন,বাহ্  কাজটা খুব চটপট করে ফেলছেন তো
-দোয়া করবেন স্যার
-তাহলে কালকের ঐ টেলিফোন ডিপার্টমেন্টের  কাজটুকুও তাড়াতাড়ি করে ফেলুন
-কালই  হয়ে যাবে স্যার
-সেকি,এত তাড়াতাড়ি,দেখবেন ভুল -ত্রুটি যেন না  থাকে।
-না স্যার ভুল থাকবে না

আক্কাস সরকারি অফিসের স্বল্প বেতনভুক চাকুরে।আর জমিলা গৃহিণি,গ্রামের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ছিলো তাও আবার গড়িয়ে গড়িয়ে।ক্রমশ  সংসারের দৈনন্দিন জীবনের পেষণে হারিয়ে ফেলেছিলো তাল, লয়, সুর,ছন্দ।
আক্কাস মাঝে মাঝেই বাজার থেকে নিয়ে আসে ফলটা-মূলোটা।ফল-মূলে শরীরে রক্ত বাড়ে।জীবনের ব্যাপ্তিতে যা অতি প্রয়োজনীয়।নতুন খবরে
জমিলার মা মেয়েকে দেখতে এসেছিলো, সাভারের এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম থেকে।সাভারের সে গ্রাম থেকে রিক্সায় নদী ঘাটে।নদী পেরিয়ে আবার বাসে ঘন্টা খানেকের পথ।মা বুড়ো মানুষ তাও  মেয়েকে দেখতে এসেছে।মা নির্ণিমেষে মেয়ের দিকে চেয়ে থাকে চালসে ধরা চোখে।তাকে ছূঁয়ে ছূঁয়ে দেখে।সমস্ত শরীর মায় পেট, বুক স্পর্শ করে যেন আগমনের সারবত্তা অনুধাবনে লিপ্ত হয় কাঁপা কাঁপা ,শীর্ণ,জরাগ্রস্ত আংগুল।মা বলে,খাওয়া-দাওয়া করিস না নাকি।
খাই তো
-তাহলে
-তাহলে,এমন ক্যান
 -কেমন ক্যান
-সামছুনের সাথে দেখা করেছিলি
-জ্বি
-কি বলে
-বলেছে ভালই তো ,তবে আবার যেতে
-গিয়েছিলি
-না,কি দরকার
 মা-আট সন্তানের মা জমিলা জননী অভিজ্ঞতা  সমৃদ্ধ।তাঁর কত নাতি-নাতনি ।তাঁর তীক্ষ্ন প্রশ্ন বানে জমিলার নাভিমূল পর্যন্ত  কেঁপে ওঠে।তবে কি?
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর ঘড়ির ছোট কাঁটা উধঃ অবস্থান থেকে খানিক ডানে হেললে জমিলার মা খাইরুন্নেসা বাড়ী যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।ব্যাগে পানের বাটাটা ঢুকাতে গেলে জমিলা বলে,মা ওই লাল চকচকা জিনিসটা কি গো।মা ঝটিতি ব্যাগ বন্ধ করে রূঢ় হন, কিচ্ছু না,নিজের কাজে মন দাও।আমার ব্যাগ ধরবে না।মায়ের এ হেন আচরনে জমিলা ওরফে জমু স্তন্ভিত হয়।আর মা খাইরুন বৃদ্ধ বয়সে নিজ অভিজ্ঞতা আর পর্যবেক্ষনে আশংকিত হয়ে পড়েন।যাত্রার ধকল আর সন্দেহের দোলাচলে তিনি পরিশ্রান্ত। তবে উনার মনের কু জিজ্ঞাসা মিটাতে উনি এখনই ধর্ণা দিবেন পীর সাহেবের কাছে,যদিও জমিলা তা জানেনা।এখনই যাওয়া দরকার,হাতে সময় নাই।  আর জমিলাও কি মায়ের আকস্মিক মানসিক পরিবর্তনে হতবাক নয়।

মায়ের এই  নাটকীয় অন্তর্ধানের মন আলোড়িত জিজ্ঞাসা , সব স্তিমিত হয়ে গিয়ে জমিলা আবার নতুন উদ্যমে দৈনন্দিন কাজে লিপ্ত হয়।ইদানিং কালের নতুন রপ্ত করা অভ্যাসমত সামান্য নাস্তা সাজিয়ে স্বামীর সামনে পরিবেশন কে।নিজের প্রতিও জমিলা এখন মনোযোগি।পরিপাটি করে শাড়ী পরে,হাতের চুড়ি কটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে লাল,নীল,সবুজ।জীবনটা তো এখন এমনই রংগীন জমিলা আর আক্কাসের কাছে।ধূসর মরূভূমিতে যে সবুজ প্রানের ইশারা।

প্রতি সন্ধ্যায় আক্কাস আর জমিলা হাঁটে ঘরের সামনের রাস্তা টুকুতে।উৎফুল্ল আক্কাস স্ত্রীকে বলেন,আস্তে হাঁট পড়ে যাবে যে অন্ধকার রাস্তা।জমিলা সন্তর্পনে হাঁটে আর হাসে।ঝুলন্ত কাস্তে চাঁদের দিকে চেয়ে আক্কাস বলেন,আল্লাহ মেহেরবাণ।জমিলাও বলে হ্যাঁ,আল্লাহ মেহেরবান।

বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-পরিজন বাসায় আসে।পান-শুপারি খায়,মস্করা করে। পঁয়ত্রিশর্ধো জমিলার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়ার সৌন্দর্য আক্কাস বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে।ঘনিষ্ঠরা পিঠে পাকালি ,লাল শাড়ী আনতে ভোলে না।মনে কিনতু খচখচে একটা ভাব থেকেই যায়।মা আক্কাসকে বলে গেল গোপনে তার মন নাকি কু গাইছে।আক্কাস ভাবে কেন সে তো অভিজ্ঞ পরামর্শ নিয়েছে।ভুল কোথায়।

তারপর?তারপর আরও অনেকগুলো দিন কাটে, মাস কাটে।কিন্তু আরাধ্য দিনটিতো আর আসে না।অনুভূতি শক্তি কি লোপ পেল।প্রাণের স্পন্দন  তো টের  পাওয়া যায় না কিংবা--আর কোন লক্ষন?

অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কোন স্পন্দনের অনুভূতি না পেয়ে  ওরা গেলেন চিকিৎসকের কাছে।অভিজ্ঞ চিকিৎসক জানালেন জমিলার জরায়ুতে বাসা বেঁধেছে টিউমার যা ধীর গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা শীঘ্রই অপসারন করা উচিৎ।জমিলা,আক্কাস একসংগে ডাক্তারকে জানায়  পূর্বের মূত্র পরীক্ষার ফলাফলের কথা।চিকিৎসক জানান জমিলা অন্তসত্বা নন।যুগপৎভাবে তার জরায়ুর টিউমার এবং সন্তান চাওয়ার তীব্র আকাংখা থেকে  সৃষ্ট হরমোনের ভারসাম্য হীনতায় শরীরে দেখা দিয়েছে অন্তসত্ত্বা নারীর লক্ষন।চিকিৎসাভাষায় যাকে বলে ফলস প্রেগন্যান্সী। আর প্রথম বারের মূত্র পরীক্ষায়ও কোন ভুল ছিলো।নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে থাকলে এ রকমটি ঘটত না।

সুবেশা-সুবেশী আক্কাস্ আর জমিলা বাড়ী ফিরলেন ভারাক্রান্ত হৃদয়ে।ওদের নিজেদের মনে হলো ওরা যেন দুটি পুষ্প বিহীন পাতাবাহার যা কখনই হয় না ফলবতী।


Friday 12 August 2016

সখি ভালবাসা কারে কয়

আমরা ক'জন একসাথে বসে গল্প করছিলাম তখন গমগমে ভরাট কন্ঠে  হঠাৎ সোহেল গেয়ে ওঠে,'সখি ভালবাসা কারে কয়'।রবীন্দ্র সংগীতের প্রথম কলিটা সবে ঠোঁটে তুলে নিয়েছে বড় গভীর আবেগে আর ঠিক তখনই মুখ ঝামটা দিয়ে মুখরা কাকলি বলে ওঠে,এ্যাই,থাম্ তো।ভালবাসার তুই কি বুঝিস রে,দেখিস তো কতকগুলো হিন্দি আর বাংলা বস্তা পচা সিনেমা আর গিলিস তো কতকগুলো বটতলার উপন্যাস।থাম এবার।

সোহেল খিঁচিয়ে ওঠে,'ম্যালা ফ্যাঁচফ্যাচঁ করিস না।দু'দিনের বৈরাগী ভাতকে বলে অন্ন।ভারী দু'কলম শীর্ষেন্দু,রবীন্দ্রনাথ আর কি সব পড়ে এক্কেবারে পাকামো হচ্ছে।

আঁতেল হিমাদ্রি বলে,শোন্,তোরা খামোকাই  ফ্যাসাদ করিস না।বেশ জম্পেশ করে বোস্,বলি তোদের ভালবাসা কাকে বলে।আঁতেল হিমাদ্রির কথা ওরা বন্ধুরা কখনই হেলাফেলা করে না।

হিমাদ্রি শুরু করে,'সেবার গরমের ছুটিতে মামাবাড়ি যাচ্ছি।'সুপার' পরিবহনের বাস্।প্রচন্ড গরম। ঊর্ধ্ব গগনে  মার্তন্ড মহাশয় একেবারে রেগেমেগে ফর্টি- নাইন।বাসের যাত্রীরা সব ঘেমে নেয়ে উঠেছে যেন।গরমে আর ঘামের গন্ধে বাসের পরিবেশ হয়েছে নরক।বাসে আমার পাশের জোড়া আসনটিতে বসেছেন এক প্রৌঢ় আর তার প্রৌঢ়া স্ত্রী।স্বামীটি বসেছেন জানালা ঘেঁষে।ঘুম কাতুরে মহিলা বাসে উঠেই আসনের পেছনটায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।সে কি যে সে ঘুম!একেবারে কুন্ভকর্নের ঘুম।জানালা গলিয়ে রোদ এসে গা পুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে কিন্ত্তু মহিলার কোন বোধ নেই।আশ্চর্য হলাম,পুলকিত হলাম,আবেশে মাথা নত হলো পুরোটা সময় ভদ্রলোক জানালার  দিকে পিঠ দিয়ে রোদ ঠেকালেন।স্ত্রী ঘুমিয়ে রইলেন ভালবাসার শীতল ছায়ায়!

রওনক ওদের সবার চাইতে একটু ভারিক্কি ধরণের।বলল, 'থাম থাম তোরা
তো শুধু ভালবাসার একটা দিকই দেখেছিস।গত শীতে গেছি পিকনিকে আমাদের পাড়া থেকে।কেউ কেউ আবার নিজ নিজ বন্ধু-বান্ধব কেও আমন্ত্রন জানিয়েছে।পরিচয় ও কুশল বিনিময় পর্ব চলছে চেনা অচেনাদের মধ্যে।এক ভদ্রলোক এসেছেন তাঁর ষোড়শী কন্যাকে নিয়ে।পরিচয় আদান-প্রদানের পর্বে ভদ্রলোক পরিচয় দিচ্ছেন নিজের ও কন্যার।কন্যার দিকে তিনি আবেগ আপ্লুত দৃষ্টিতে তাকালেন। চোখ দুটো তাঁর ভালোবাসা আর গর্বে মাখামাাখিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।কোন এক আলো যে ধ্রুপদী  নাচ নেচে গেল তাঁর চোখ দুটোয়।আলাপের ফাঁকে চোখ থেকে চশমা খুলে কন্যার ওড়নার প্রান্তে মুছে নিলেন।আমি প্রত্যক্ষ করলাম এক স্বর্গীয় প্রেম পিতা ও কন্যার মধ্যে।


শোন আমি শোনাই তোমাদের  ভ্রাতৃ প্রেমের কাহিনী,বলল আহমদ।দু সহোদর।দুজনা দুজনার প্রাণ।বছর পাঁচেকের বয়সের তফাৎ।স্কুল পড়ুয়া ভাই দুটির  কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারে না। পিতৃহীন ভাই দুটি দরিদ্র মায়ের ছিন্ন আঁচলের আশ্রয়ে তরতর্ করে বেড়ে উঠছে মফস্বলের বস্তিতে।খরো চৈত্র মাসে কি ভাবে যেন আগুন লাগে বস্তিতে।আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে পুরো বস্তি।দুঃখি মা কোথায় গিয়েছিলো কাজে ।বড় ভাইটি সামনে দোকানে ফুট -ফরমাস খাটছিলো।আগুন দেখে এক ছুটে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত ছোটভাইকে বুকে জাপটে বেরিয়ে এল বটে কিন্তু ততক্ষনে নির্দয় আগুন তাকে গ্রাস করেছে।

আমি বললাম,আমি তোদের আর এক কাহিনী শোনাই।গ্রাম্য সালিসি ও সমাজের অত্যাচার এবং জটিল মনস্তত্বের কাহিণি।মানুষের মনের নাগাল পাওয়া ভাই ভারি দুরূহ ব্যাপার।মাস দুয়েকের শিশু সন্তান নিয়ে দরিদ্র  যুবক কৃষক ও কিশোরি কৃষাণীর সুখের সংসার।কথায় বলে না রাগ হলো চন্ডাল।তুচ্ছ কারণে সেই চন্ডাল পেয়ে বসল কৃষককে।কৃষক রাগে কাঁপতে কাঁপতে চীৎকার করে কৃষাণীকে দিয়ে দিল তালাক।আর যায় কোথায়।পাড়ার
লোকজন,মাতবর সেই তালাক কার্যকর করায় এক কাপড়ে শিশুপুত্র সহ স্ত্রী গৃহত্যাগ করল।সবাই হৈ হৈ করে উঠলো,'এ্যাই ভিন্ন প্রসংগে যাচ্ছ কেন?আমি বললাম,না প্রসংগ পাল্টাইনি ধৈর্য ধর।তারপর এই যুবক ও কিশোরি তাদের জীবন অতিবাহিত করল  বড়ই কষ্টে,সংগীবিহিন।আমার বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করে,তুই এত কথা জানলি কি ভাবে। আরে্ ঐ  প্রৌঢ়ত্বের শেষ কোঠায় পৌঁছানো মহিলা তখন আমাদের ঘরে ঠিকা কাজ করত যে।একসময় মহিলার স্বামী ও যুবক ছেলে শহরে এসে হাজির।মহিলা পরম মমতায় শাক-ভাত,পাতে একখানি কাঁচামরিচ সাজিয়ে বুড়োর সামনে সাজিয়ে ঘোমটায় মুখ ঢেকে খানিকটা দূরে বসে থাকত।লোকটি যে পরপুরুষ,তার স্বামী নয়। কখনও নিজে অভুক্ত থেকেও বুড়োকে খাওয়াত। প্রশ্ন করলে চোখে আঁচল চাপা দিয়ে বলত,'সবই অদেষ্ট'। সবাই বিষণ্ণতায় খানিক চুপ কর থাকল।

একসময় নীরবতা ভংগ করে হায়দার বলে,তবে শোন তোরা আমার আপন খালা খালুর গল্প।আমার মায়ের আপন বোন লীজা খালা,মায়ের ছ' বছরের ছোট।খালা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন এবং পড়াতেন।তো লেখাপড়া করতে করতেই তিনি প্রেমে পড়লেন।পড়বি তো পড়্ একেবারে ঘাড় মাথা মুড়িয়েই পড়লেন।প্রেমে পড়লেন আমাদের খালুর সাথেই।তো সে প্রেম এক অনবদ্য কৈশোর প্রেম।খালা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থি আর খালু উচ্চ মাধ্যমিক।আট বছরেরও বেশী সময় প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার পর অবশেষে নৌকা ঘাটে ভিড়ল।প্রেমের বিয়ে হলে কি হবে প্রতিদিন মান-অভিমান, ঝগড়া-ঝাঁটি লেগেই থাকত।আবার কি ভাবে যেন মিটমাটও হয়ে যেত।সেই খালা বলা নেই কওয়া নেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেলেন হঠাৎ।হাসপাতাল থেকে মরদেহ যখন বাসায় এল,খালু একবার শুধু তাকিয়ে বললেন,'লিজা তুমি যাও আমি আসছি।তারপর ধীরে সুস্থে বিছানায় গিয়ে শুলেন।মরা বাড়ীতে সবাই ব্যস্ত।তারই এক ফাঁকে খালার বড় মেয়ে খালুকে ডাকতে গিয়ে দেখল খালু নেই-চলে গেছে-খালার কাছে -তার লিজার কাছে।সবার মন ভারাক্রান্ত হল।

কলেজের দুপুরের একঘন্টা বিরতির সময় শেষ হল।সবাই চললাম যে যার ক্লাসে।মনে বেশ অনুরণন চলল খানিক সময় ধরে ভালবাসার বিভিন্ন ঘটনাগুলো নিয়ে।